Ticker

6/recent/ticker-posts

অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে রোহিঙ্গার ঢল

 অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে রোহিঙ্গার ঢল


অনলাইন ডেস্ক

 ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পিএম


দীর্ঘদিন ধরে মায়ানমারে জান্তা সরকার ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকার আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের তীব্রতা বেড়েছে। ফলে, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী পার হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে সাবরাং, বাহারছড়া, টেকনাফ সদর মহেশখালীয়া পাড়া, লম্বরী, কেরুনতলী, পৌরসভার নাইট্যং পাড়া, উখিয়ার আঞ্জুমান পাড়া, বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি, ঘুমধুম, তুমব্রু, জলপাইতলী, এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের জন্য ৫০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।


সূত্রমতে, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দালালচক্রকে ব্যক্তিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিলে মিলে যায় অবৈধ অনুপ্রবেশের টিকেট। রাতের অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলদলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে বিভিন্ন দালাল চক্র। বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তের দালাল চক্রের সমন্বয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এই দুই দেশের দালালচক্রের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত অনেক রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থানরত দালালচক্রটি অবৈধ অনুপ্রবেশের সাথে তেল, ডিজেল, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য পাচার ও মাদক সরবারাহের সাথে জড়িত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমধ্যে কিছু চালান জব্দ করতে পারলেও অধিকাংশ চালান ওপারে পৌঁছে যাচ্ছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের পাশাপাশি স্বর্ণ ও মাদকের বিনিময়ে এপারে প্রবেশ করানো হয়। নতুন করে প্রায় ৬০ হাজার মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা যায়। বিভিন্ন চক্রের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত চোরাকারবারিদের আশ্রয়ে রোহিঙ্গা শিবির ও উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ভাড়া বাসায় মোটা অঙ্কের বিনিময়ে অনুপ্রবেশকারীরা বসবাস করছে।উখিয়া-টেকনাফ তথা কক্সবাজার জেলায় সংঘটিত অবৈধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। টেকনাফে অপহরণচক্র ও পাহাড় সন্ত্রাসীদের দলে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়রা মিলেমিশে একাকার।


এদিকে, মায়ানমারের মংডু শহর দখলে নেওয়ার পর, আবার একের পর এক জান্তা সরকারের ঘাটি ও রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্ত দখলে নিচ্ছে আরাকান আর্মি। গত (২০ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মির মুখপাত্র জানান, মায়ানমার মিলিটারির ওয়েস্টার্ন কমান্ড দখল করে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে। সেই সঙ্গে ডেপুটি রিজিওনাল কমান্ডার জেনারেল থাউং তুন এবং জেনারেল কেয়ো কয়োকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে। রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ শহর এখন আরাকান আর্মির দখলে। বিশ্বের গণমাধ্যমে কক্সবাজার সীমান্তের পাশে যে কোনো মুহূর্তে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা আসার সম্ভাবনার কথা প্রচার করা হচ্ছে। 


টেকনাফ উপজেলা রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সাথে বিশাল একটি দালাল চক্র কাজ করছে। রাতের আধারে রোহিঙ্গারা নাফ নদী ও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট অবলম্বন করে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে, জানতে পেরেছি সীমান্তে ওপারে বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশের জন্য রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। এর আগে, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের স্থান দেওয়ার ফল ভোগ করছে কক্সবাজারের মানুষ। ফের যদি অনুপ্রবেশ বাড়ে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দ্বিগুণ হবে এবং চাঁদাবাজি বেড়ে যাবে। 


এসবের মধ্যে (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দূর্নীতির কারণে স্থল, জলসীমাসহ বিভিন্ন রুট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আটকানো কঠিন হচ্ছে। আমাদের নীতিগত অবস্থান ছিল আমরা কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেব না। তবে মাঝেমধ্যে পরিস্থিতি এমন দাড়ায় আমাদের আর কিছু করার থাকে না। সেইরকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে ঢুকতে দিয়েছি এমনও নয়, তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছেন। 


জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, টেকনাফে এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে এমনটা শোনা যায়নি। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।


নাইক্ষংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের কাছে বসবাসরত কিছু দালাল চক্র রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে বলে শোনা গেছে। তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং দালাল চক্রের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এদিকে, ২৫ ডিসেম্বর মায়ানমারে ফিরতে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা আলেম-ওলামারা সমাবেশ করেছেন। এতে রোহিঙ্গা মাঝি, নেতাসহ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অংশ নেন।

সমাবেশ রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, দীর্ঘ আট বছর বাংলাদেশ আমাদেরকে আশ্রয়ে রেখেছে। কিন্তু শত চেষ্টার পরও বাংলাদেশ থাকা রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেনি।

 স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ব্যর্থতার দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উল্লেখ করে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তাদের অসহযোগিতা ও আন্তরিকতার অভাবে আমরা স্বদেশে ফিরতে পারছি না। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে দেশে ফিরে যেতে চাই। মিয়ানমার আজাদের জন্য রক্ত বিসর্জন দিতে হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নয়, আরাকানে গিয়ে রক্ত দেবো। আমরা আরাকান স্বাধীন করবো।